রাশিয়ার কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করা উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় শহর ইজিয়ুমে প্রায় সাড়ে চারশ মৃতদেহের একটি গণকবরের সন্ধান পাওয়ার কথা জানিয়েছে ইউক্রেইনের কর্তৃপক্ষ।
এই মৃতদের মধ্যে গোলা ও বিমান হামলায় নিহত অনেকের মৃতদেহও আছে বলে জানিয়েছে তারা। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
“আমি কেবল বলতে পারি, এটি মুক্ত করা অঞ্চলের একটি বড় শহরের অন্যতম বৃহৎ গণকবর। এক জায়গাতেই ৪৪০টি মৃতদেহ মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কিছু মারা গেছে গোলায়, কিছু বিমান হামলায়,” স্কাই নিউজকে এমনটাই বলেছেন খারকিভ অঞ্চল পুলিশের প্রধান তদন্তকারী সেরহি বলভিনভ।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স ইউক্রেইনের এই দাবির সত্যতা তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করতে পারেনি। এই অভিযোগের বিষয়ে রাশিয়ারও তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ইজিয়ুম দখল করে শহরটিকে খারকিভ অঞ্চলের কৌশলগত কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার পর গত সপ্তাহান্তে হাজার হাজার রুশ সেনা শহরটি ছেড়ে পালায়, ফেলে যায় বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ও সামরিক সরঞ্জাম।
ইউক্রেইনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক টুইটে লিখেছে, “রাশিয়ার কাছ থেকে মুক্ত করার পর ইজিয়ুমে গণকবর মিলেছে। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় গণকবরে ৪৪০টি অচিহ্নিত কবর আছে।”
ইউক্রেইনের সেনাদের অভিনন্দন জানাতে বুধবার কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়াই ইজিয়ুম সফরে যাওয়া প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়াকে দায় দিয়ে ইজিয়ুমে পাওয়া গণকবরের সঙ্গে বুচার ঘটনা তুলনা করেছেন।
ইউক্রেইনে অভিযান শুরুর প্রথম পর্যায়ে রুশ বাহিনী কিইভের উপকণ্ঠের বুচা ছেড়ে যাওয়ার পর সেখানেও বিপুল সংখ্যক বেসামরিক মানুষের মৃতদেহ পাওয়ার কথা জানায় ইউক্রেইন। রুশ সেনারাই এসব বেসামরিককে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছিল তারা।
কিইভ এবং তাদের পশ্চিমা মিত্ররা রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে বুচায় যুদ্ধাপরাধ করার অভিযোগও এনেছে। এর বাইরে রাশিয়া দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী মারিউপোলে পৃথক অভিযানেও লাখো বেসামরিক হত্যা করে থাকতে পারে বলে এপ্রিলে ইউক্রেইনের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছিলেন।
“রাশিয়া সর্বত্র মৃতদেহ রেখে যাচ্ছে, তাদেরকে অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে,” বৃহস্পতিবার রাতে দেওয়া ভিডিও ভাষণে বলেছেন জেলেনস্কি।
রাশিয়া তাদের অভিযানে বেসামরিকদের ‘লক্ষ্য বানানো’ বা যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
সপ্তাহখানেক ঝড়ের বেগে উত্তরপূর্বের বিশাল এলাকা দখলের পর ইউক্রেইনের কর্মকর্তারা এখন বলছেন, রুশ বাহিনী তাদের প্রতিরক্ষা জোরদার করায় কিইভবাহিনীর পাল্টা আক্রমণের গতি বজায় রাখা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
চলতি সপ্তাহে পাল্টা আক্রমণ শুরুর পর ইউক্রেইন এখন পর্যন্ত রুশ বাহিনীর হাত থেকে অন্তত ৯ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখন পর্যন্ত তার বাহিনীর এই পিছু হটা নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি।
রাশিয়ার সেনাদের হাত থেকে পুনরুদ্ধার করা পূর্বাঞ্চলীয় শহর কুপিয়ানস্কের অসংখ্য ভবন হয় পোড়া না হয় বিধ্বস্ত বলে রয়টার্সের ভিডিওতে দেখা গেছে।
ইউক্রেইনীয় বাহিনীর সাম্প্রতিক অগ্রযাত্রার গতি শীতের আগে আরও আরও এলাকা পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছিল।
কিন্তু ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চলীয় লুহানস্ক অঞ্চলে গভর্নর সেরহি হাইদাই বলেছেন, তিনি যে অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেটি রাশিয়ার কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করা অনেক কঠিনই হবে।
ইউক্রেইনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা লুহানস্ককে রাশিয়া স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিলেও রুশ সেনারা অন্তত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত খারকিভ, কুপিয়ানস্ক ও ইজিয়ুমে লাগাতার গোলাবর্ষণ করে গেছে বলে টেলিগ্রামে জানিয়েছেন খারকিভ অঞ্চলের গভর্নর ওলে সিনেহুবভ।
গোলায় অনেক বাড়িঘরের ক্ষতি হচ্ছে, অনেকে আহত হচ্ছে, বলেছেন তিনি।
রাশিয়া বৃহস্পতিবার রাত ৯টা পর্যন্ত সীমান্তবর্তী একটি অঞ্চলে ৯০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ও কামানের গোলা ছুড়েছে বলে জানিয়েছেন সুমাই অঞ্চলের গভর্নর দিমিত্র ঝিভিৎস্কি।
এদিকে রাশিয়ার বেলগোরদ অঞ্চলের গভর্নর ভায়াচেস্লাভ গ্লাদকভ বলেছেন, ইউক্রেইনের সেনারা সীমান্তের কাছে রাশিয়ার ভালুইকি শহরে গোলা ছুড়েছে।
“বিমানবিধ্বংসী প্রতিরক্ষা কার্যকর ছিল, তা সত্ত্বেও কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে,” টেলিগ্রামে বলেছেন তিনি।
কিইভবাহিনীর ওই হামলায় একটি বিদ্যুতের সাবস্টেশন অকার্যকর হয়ে পড়েছে এবং একাধিক বাড়ি ও যানবাহনে আগুন ধরে গেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
দুইপক্ষের এসব দাবির কোনোটিরই সত্যতা যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স।