আর্থিক সাহায্য মেলেনি, ভারতে সরকারি ভবন-রাস্তায় গরু ছেড়ে দিয়ে প্রতিবাদ


FE Team | Published: September 27, 2022 21:10:47 | Updated: September 29, 2022 13:59:18


ছবি: বিবিসি

সরকারের প্রতিশ্রুত ৫০০ কোটি রুপির তহবিল সাহায্য না পাওয়ায় ভারতের গুজরাটে গরুর আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনাকারী দাতব্য ট্রাস্টগুলো রাস্তা ও সরকারি বিভিন্ন ভবনে গরু ছেড়ে দিয়ে অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছে।  বিবিসি’র বরাত দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এ খবর জানিয়েছে।

সরকার তহবিল দিতে ব্যর্থ হলে আসন্ন রাজ্য নির্বাচন বয়কটেরও ঘোষণা দিয়েছে প্রতিবাদকারীরা।

সরকারি ভবনগুলোতে গরুর ঘুরে বেড়ানোর বেশ কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

কয়েকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েকদিনে গুজরাটের বেশ কয়েকটি এলাকার রাস্তা, স্থানীয় আদালত এবং সরকারি ভবনে গরু বিচরণ করতে দেখা গেছে।

এছাড়া, সরকারি দপ্তরে বিক্ষোভকারীদের গোমূত্র ও গোবর নিয়েও হাজির হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। রাস্তায় গরুর পালের কারণে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। কয়েকটি জায়গায় যান চলাচল বন্ধও হয়ে যায়।

ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যের মতো গুজরাটেও চর্মরোগের প্রাদুর্ভাবে গবাদি পশুর মৃত্যু হচ্ছে। গুজরাটে লাম্পি রোগে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৮শ’র বেশি গবাদি পশুর মৃত্যু এবং এক লাখ ৭০ হাজার গবাদি পশু আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে গরু পবিত্র প্রাণী হিসেবে বিবেচিত। দেশের ১৮টি রাজ্যে গোহত্যা অবৈধ। আর ২০১৭ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রেখে গোহত্যা নিষিদ্ধ আইন পাস হয় ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন গুজরাটে।

চলতি বছর বাজেটে গুজরাট সরকার রাজ্যের গরু ও অন্যান্য প্রাণীদের বৃদ্ধি ও আশ্রয়ণের জন্য ৫০০ কোটি রুপি বরাদ্দ ঘোষণা করেছিল।

তবে গরুর আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থাপকরা বলছেন, এ বরাদ্দের আওতায় কোনও তহবিল তারা পাননি। সরকারের কাছ থেকে প্রতারণার শিকার হয়েছেন তারা। সরকারের সঙ্গে কয়েকদফা আলোচনায়ও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে তারা অভিযোগও করেছেন।

গুজরাটে ১ হাজার ৭৫০ টি গরু আশ্রয়কেন্দ্র বা পাঞ্জরাপোল রয়েছে। সেখানে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ গরু থাকে। আশ্রয়কেন্দ্র ট্রাস্টকে প্রতিদিন গরু প্রতি ৬০ থেকে ৭০ রূপি খরচ করতে হয়।

 

কোভিডের পর আশ্রয়কেন্দ্রের অনুদান পাওয়া কমেছে। তহবিল ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্র চালানো কঠিন হয়ে উঠছে। সরকার দ্রুত তহবিল না দিলে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন ট্রাস্টিরা।

গুজরাট গো সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক বিপুল মালি বলেন, “উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলো সরকারের সমর্থন পাচ্ছে। এমনকী কংগ্রেস শাসিত রাজস্থান গরুপ্রতি ৫০ রুপি পাচ্ছে। তাহলে গুজরাট কেন ব্যর্থ হচ্ছে?”

এর প্রতিবাদে গত কয়েকদিনে গবাদি পশু ছেড়ে দিয়ে রাস্তা অবরোধ করেছে বিক্ষোভকারীরা। স্থানীয় আদালত চত্ত্বর ও সরকারি ভবনে পশুদের বিচরণে মলমূত্র ছড়িয়ে থাকতেও দেখা গেছে। এ ঘটনায় কয়েকটি জেলা থেকে অন্তত ৭০ জন বিক্ষোভকারীকে পুলিশ আটক করেছে।

গুজরাটের পশুপালন মন্ত্রী বাজেট আটকে থাকার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে এর জন্য ‘প্রশাসনিক জটিলতাকে’ দায়ী করেছেন। দু’এক দিনের মধ্যে তা সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “প্রশাসনিক জটিলতার কারণে সহায়তা বিলম্বিত হয়েছে। আশা করি আগামী এক বা দুই দিনের মধ্যে একটি ইতিবাচক সমাধান খুঁজে বের করতে পারব।”

মন্ত্রীর আশ্বাসে বিক্ষোভকারীরা আপাতত কর্মসূচি বন্ধ রেখেছে। তবে এ মাসের শেষের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুমকিও দিয়েছে তারা।

Share if you like